লক্ষ্য অর্জন করতে পারা কে সফলতা বলে।
অনেকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লক্ষ্যে পৌঁছালে জয়ী বলা হয়।
আত্মসমর্পণ একটি সর্বজনবিদিত ও পরিচিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হ’ল সম্পূর্ণরূপে অন্যের কাছে নতি স্বীকার করা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হ’তে আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করা বা উৎসর্গ করা। অবশ্য উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, তাদের মৌলিক অর্থ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মোটামুটি সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে আত্মসমর্পণের প্রথম অর্থ নতি স্বীকার সম্পূর্ণরূপে পার্থিব জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে এর কার্যক্রম স্পষ্টতঃই সীমাবদ্ধ। পৃথিবীর প্রাচীন জ্ঞানী-গুণী পন্ডিতগণ তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল হ’তে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়াকে শান্তি ও মীমাংসার প্রয়াসে আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত করেন। এর ফলশ্রুতিতেই পৃথিবীর বুকে বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক রক্তক্ষয় অপেক্ষাকৃত হ্রাস পায় এবং সন্ধি-চুক্তির পথ সহজতর হয়।
মানুষ বলতেই জীবনে সফলতা চাই। আর সফল হওয়া খুব কঠিন কিছু না যতটা আমরা ভাবি আবার অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে অতটা সহজও না। সব মানুষেরই সফলতার চুড়ান্ত শিকরে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু সবাই কি পারে নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে? জীবনে সফল হওয়ার সিক্রেট কৌশল কি?
স্বপ্ন দেখ কিন্তু লক্ষ্য স্থির করো নাঃ
অনেকেই হয়ত ভাবছেন এটা আবার কেমন কথা, স্বপ্ন দেখবো কিন্তু লক্ষ্য স্থির না করলে সফল হবো কিভাবে? স্বপ্নতো সবাই দেখে কিন্ত সেটা বাস্তবে রুপান্তর করতে পারে কতজন। যে বা যারা বলে আমি স্বপ্ন দেখি জীবনে বড় কিছু করার তাহলে তাদেরকে বলব, দেখলে বড় স্বপ্ন দেখ কিন্তু জীবনের লক্ষ্য ছোট বেলাতেই স্থির করে ফেলো না। যদি বলি স্বপ্ন আসলে কী? – স্বপ্ন হচ্ছে সেটা যেটা শুনলে লোকে চমকে উঠবে এবং লোকে বলবে না না এটা কখনোই সম্ভব না -তাই হলো স্বপ্ন । আর যেটা সম্ভব এবং ঘটানো সম্ভব সেটা তো বাস্তব এটা কখনোই স্বপ্ন হতে পারে না। বাস্তব জিনিসকে কেন আমরা স্বপ্ন বলবো? স্বপ্নের কথা শুনে লোকে যদি পাগলই না হলো তাহলে সেটা কখনোই স্বপ্ন না। তাইতো আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো, ইন্জিনিয়ার হবো, সাইন্টিস্ট হবো এগুলো সব পূরণ করা সম্ভব তাহলে এগুলো স্বপ্ন হলো কিভাবে!
তোমার যা ভালো লাগে তাই করোঃ
সবার সব কিছু ভালোলাগে না। কেউ গান গাইতে ভালোবাসে তো কেউ ছবি আঁকতে আবার অনেকের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর প্রতি ভালো লাগাটা কাজ করে। তাই তোমার যেটা ভালোলাগে তাই করো কিন্তু যেটা করবে নিষ্ঠার সাথে করো। জীবনে সফল হওয়ার জন্য, কে কি ভাববে, কে কি বলবে, কার কি ইচ্ছা তোমাকে পূরন করতে হবে সেগুলো ভেবে কিছু করতে যেওনা।
প্রচন্ড পরিশ্রম এবং সাধনা করতে শেখোঃ
আমাদের সবার মাঝে কিছু না কিছু প্রতিভা আছে ঠিকই কিন্তু আমরা সবাই কি সেটা সঠিকভাবে কাজে লাগায়, না কখনোই না। যদি সত্যই আমরা সেটাকে কাজে লাগাতাম তাহলে আমাদের দেশ তথা বিশ্ব আজকের দিনে দাড়িয়ে আরো অনেক উন্নত হতে পারতো। আমাদের ভালোলাগা বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যদি লেগে থাকি বা চেষ্টা করি তাহলে আমারা জীবনে সফল হতে পারবো।
নেগেটিভিটি বা নেগেটিভ ভাবনা বর্জন করোঃ
নেগেটিভিটি খুবই খারাপ জিনিস যেটা তোমার প্রচেষ্টাকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম। সবার মাঝে সর্বক্ষেত্রে কিছু না কিছু নেগেটিভিটি কাজ করে এবং যেটা আমাদের দুর্বল করে দেয়। আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই এবং তখন সেই কাজটি যদি ঠিক মতো না হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সময়ে আমাদের মাঝে নেগেটিভিটি কাজ করে এবং আমরা হাল ছেড়ে দেয়। এতে করে আমাদের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু আমরা যদি মাঝ পথে থেমে না গিয়ে চেষ্টা করি হয়তোবা দেখা যাবে একবার না একবার আমরা সফল হবোই।
ব্যর্থ জীবন বলতে কিছু নেইঃ
সব জীবনই সফল তাই ব্যর্থ জীবন বলতে আসলে কিছু নেই। সবাইকে বিখ্যাত হতে হবে বা সবাইকে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্ক পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যে যেটুকু কাজ করতে সক্ষম তার সেই কাজটুকুই কারা উচিত। তাই নিজেকে ব্যর্থ ভেবে ব্যর্থতাই ভেঙ্গে পরার কিছু নেই।
সফল উদ্যোক্তাঃ দেখা ও শেখা
কোন বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে, সে বিষয়ে সফল হওয়া অসম্ভব। পৃথিবীতে যত সফল উদ্যোক্তা আছে, তাদের প্রত্যেকেই হয় অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে না হয় বই পড়ে শিখেছে। তাই তো সফল উদ্যোক্তা এবং পৃথিবীর সেরা ধনী বিল গেটস, প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে ৫টি বই পড়ার কথা বলেছেন। যথা:
Mindset: Carol Dweck's The New Psychology of Success Where Good Ideas Come From: Steve Jobs (Walter Isaacson), The Natural History of Innovation (Steven Johnson), Business Adventures (John Brooks), and The Black Swan: The Impact of the Highly Impossible by Nasim Taleb, এর ফলে আপনাকে আর কষ্ট কিংবা টাকা হারাতে হবে না।
কে কি বললো সেদিকে কান না দেওয়াঃ
তোমার সফলতার পথে হয়তো সব মানুষকে তুমি তোমার পাশে পাবে না, কেউ তোমার পাশে থাকবে কেউ থাকবে না। তাই সবাইকে উপেক্ষা করে নিজের পথে নিজেরই এগিয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের দেশে একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখনি তার পরিবারের লোকেরা ঠিক করে ফেলে সেই শিশুটি বড় হয়ে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হতে হবে। ছোটোবেলা থেকে এইকথাগুলো শুনতে শুনতে বড় হওয়া শিশুগুলো তাদের পড়াশোনা এবং বড়দের স্বপ্ন পূরণের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের কি ইচ্ছা, তাদের কি ভালোলাগে অথবা তারা আসলে কি চাই সেটা ভাবতেই ভূলে যায়। আর এটি অনেক সময় তাদের সফলতার ক্ষেত্রে বাঁধার কারন হয়ে দাড়ায়।
একাগ্রতা বা প্যাশন থকতে হবেঃ
জীবনে সফল হওয়ার জন্য, যে কাজই করো না কেন, হোক কাজটি ছোটো বা বড় কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে, থাকতে হবে একাগ্রতা বা প্যাশন। যত বাধা আসুক না কেনো তোমার কাজটি ঠিকভাবে করার চেষ্টায় কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। যেটা করবে মন দিয়ে করার চেষ্টা করো। কাজ করতে হবে শেখার জন্য, নিজে স্কিল কে আরেকটু লেভেল আপ করে জন্য।শুধু মাত্র দায় মেটানোর জন্য কাজ করলে উন্নতি আসবে না।
মনে রাখো প্রতিটি জীবনই সুন্দর এবং মূল্যবানঃ
ভাবতে শেখো কোনো জীবনই ব্যর্থ নয়। আমরা যে যা করছি বা করব, সেটা আমাদের নিজেদের কাছের মূল্যবান হওয়া উচিত। কোনো কাজেই ছোটো না তাই তুমি যেটাই করো সেটাই মূল্যবান। হতাশা নিজেকে গ্রাস করে নেয়ার আগে নিজেকে মোটিভেটেড করো। মনে রেখো, তোমাকে যে সব চাইতে বেশি সাহাজ্য করতে পারে, সেই ব্যক্তি তুমি।
শিক্ষিত হওয়া জরুরীঃ
জীবনে সফল হওয়ার জন্য শিক্ষিত হওয়া জরুরি। কিন্তু সেটা জেনো শুধু একাডেমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না থাকে। শুধু লেখাপড়া শিখলেই কোনো মানুষ শিক্ষিত হতে পারে না। শুধু স্কুল কলেজে গেলেই কেউ শিক্ষিত মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করতে পারে না। শিক্ষিত হয় তারা যারা তাদের আশেপাশের সবকিছু থেকে শিক্ষা নিতে পারে কিন্তু শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েই কেউ কখনো সফল হতে পারে না।
উদ্ভাবনী হনঃ
- ব্যবসায়ের পরিবেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। যেই কলা-কৌশল গতকাল কাজ করেছে, হতে পারে সে কলা-কৌশল আগামীকাল কাজ করবে না। নিজেকে কোন কিছুতে স্থির রাখা যাবে না। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।
- বক্সের বাহিরে চিন্তা করার চেষ্টা করুন। বাজরে কখন কিসের চাহিদা থাকে, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যুগের সাথে নিজের ব্যবসাকে তাল মেলানোর চেষ্টা করুন।
- ঝুঁকি নিন এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন
- মানুষ সাধারণত ঝুঁকি বিমুখ। কিন্তু একজন উদ্যোক্তার মধ্যে যদি এই বদগুণ থাকে তাহলে তার উদ্যোক্তার পথে না হাটাই ভাল। ঝুঁকি উদ্যোক্তার জীবনের একটি অংশ। তবে, সব ধরণের ঝুঁকি নেয়াটা সবসময় উচিত নয়।
- একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ হল, সে জানে কোন ঝুঁকি নিতে হবে এবং কোন ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়। ঝুঁকি নেয়ার পূর্বে অবশ্যই সেই বিষয়ে অ্যানালাইসিস করুন।
অ্যানালাইসিস করার সময় বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যথা:
- ঝুঁকি সনাক্ত করা।
- নির্দিষ্ট ঝুঁকির জন্য সম্পদের দুর্বলতা মূল্যায়ন করা।
- সম্পদের উপর সম্ভাবনা, আক্রমণের এবং ফলাফলের পরিমাণ নির্ধারণ।
- ঝুঁকি কমানোর উপায় চিহ্নিত করা।
- যখন কোন বিষয়ে ঝুঁকি কম থাকবে এবং লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে, তখন বুদ্ধিমানের কাজ হল ঝুঁকি নিয়ে নেয়া। সুযোগে সদ্ব্যবহার করাটা উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ।
- লক্ষ্যকে ভিজ্যুয়ালাইজ করুন
- আপনার লক্ষ্য যদিও সফল উদ্যোক্তা হওয়া। কিন্তু এটা সঠিক লক্ষ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ দেখুন, নিচের কোনটি আপনার লক্ষ্যকে ভালভাবে প্রদর্শন,
- আমি সফল উদ্যোক্তা হতে চাই ।
- গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে পারে, এমন বিষয়ের উপর কাজ করে সফল উদ্যোক্তা হতে চাই।
উপরের দুটি অপশনের মধ্যে ২য়টি কিন্তু খুব ভালভাবে আপনার লক্ষ্যকে প্রকাশ করে।
সফল উদ্যোক্তা হবে কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন, সেটা নির্ধারণ করা জরুরি। আপনার লক্ষ্য পূরণের ধাপগুলো ভিজ্যুয়ালাইজ করার চেষ্টা করুন।
মূলধনের উৎস নির্ধারণ
একজন নতুন উদ্যোক্তার জন্য সাধারণত দুটি মাধ্যম থেকে মূলধন সংগ্রহ করা যায়। যথা:
আভ্যন্তরীণ উৎস: নিজস্ব তহবিল, পারিবারিক সঞ্চয়, আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঞ্চয় ইত্যাদি।
বাহ্যিক উৎস: ব্যাংক ঋণ, সরকারি ঋণ, শেয়ার বাজার ইত্যাদি।
একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে আপনার মূলধনের উৎস নির্ধারণ করুন। ব্যাংক লোণ নিলে আপনাকে অতি উচ্চ মাত্রায় সুদ দিতে হবে, যা কিনা প্রাথমিক অবস্থায় আপনার জন্য বড় বাঁধা। তাই চেষ্টা করুন আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মূলধন জোগাড় করা। আর বাহ্যিক উৎস হিসাবে সরকারি ঋণের খাতকে নির্বাচন করতে পারেন।
গ্রাহক নির্ধারণ এবং অভিযোগ গ্রহণ করুন
আপনার ব্যবসায়ের গ্রাহককে তা সঠিক ভাবে নির্বাচন করুন এবং মার্কেটিং করুন। যেমন আপনি শিশুদের জন্য পণ্য তৈরি করেন। এর অর্থ এই নয় আপনার গ্রাহক শিশু। বরং আপনার পণ্য শিশুদের জন্য হলেও মূল গ্রাহক কিন্তু শিশুর পিতা-মাতা। সুতরাং, এই ভাবে গ্রাহক নির্ধারণ করে কাজ করুন।
ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অন্যতম নিয়ম হল গ্রাহকে অভিযোগ শোনা। অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে যদি সে অনুযায়ী কাজ করনে। তাহলে দ্রুত গ্রাহক সন্তুষ্টি পাবেন এবং সফল হতে পারবেন।
ইতিহাসের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিরা আমার তোমার মতই একেকজন পৃথিবীর আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ, ভিনগ্রহের আগন্তুক নন। প্রচেষ্টা আর সাধনায় তাঁরা ছাড়িয়ে গেছেন অন্যদের প্রতিদিন একটু একটু করে। একটুখানি উদ্যোগ নিলে তুমিও পারবে একদিন তাঁদের কাতারে নাম লেখাতে।