কুসংস্কার এক ধরনের অন্ধবিশ্বাস হলেও একে সমাজ জীবনের অভিশাপও বলা চলে। অনেকে একে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে! যদিও মনের অজ্ঞানতা, যুক্তিহীনতা আর বিবেক-বুদ্ধির অভাব থেকেই কুসংস্কারের জন্ম।
প্রকৃতপক্ষে কুসংস্কার পেছনে কোনরকম সত্যতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যুগ যুগ ধরে লোকমুখে প্রচলিত মিথ্যা ধারণা, কিছু বানানো গল্পের মিথ্যা রটনা আর মনের অন্ধকারজনিত বিশ্বাসই এর মূল ভিত্তি। কুসংস্কারের প্রভাবে সমাজের পাশাপাশি মানবজীবনের অনেক ক্ষতি হয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও অশিক্ষা থেকে সৃষ্টি হয় যাবতীয় কুসংস্কারের। ফলে সমাজে নানারকম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
এরূপ হাজারও কুসংস্কার দৈনন্দিন জীবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব কুসংস্কার মূলত সামাজিক জীবনের প্রতিবন্ধক এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্তরায়। কুসংস্কার আমাদের সমাজের কিছু মানুষের নিকট এক নিমর্ম সত্য বলে বিবেচিত, মূলত এই কুসংস্কার গুলি এক হাস্যস্পদ ব্যতীত অন্য কিছু নয়। যেমনঃ
- এক দম্পতির সন্তান গর্ভে থাকায় কোন কিছু জবাই করা থেকে বিরত থাকছে দীর্ঘ নয় মাস পর্যন্ত। কোন দিন চন্দ্র গ্রহণ অথবা সূর্য গ্রহণ লাগবে সেই আগাম বার্তায় নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত আহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকছে।
- এছাড়াও আসরের নামাযের পর থেকে ফ্রিজ খোলা দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত তাদের নিকট।
- আবার মাথায় দেখলাম মাছ ধরার জাল খোঁপার সাথে গেঁথে রেখেছেন বাতাস লাগবে বলে।
এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও সমাজের অনেক মানুষ এখনো কুসংস্কারে নিমজ্জিত। এক্ষেত্রে শিক্ষিত আর অশিক্ষিত উভয় শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই কুসংস্কার লক্ষণীয়। যেমনঃ
- মেয়েদের শ্রী বা সৌন্দর্য বিচারের ক্ষেত্রে লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী ইত্যাদি নিয়ে বিভাজন চলে।
- এক শালিক দেখলে দিন খারাপ যাবে।
- ঘর থেকে বেরোবার সময়, অসাবধানতাবশত হোঁচট খেলে, কেউ কেউ খানিকটা বসে তারপর বাড়ি থেকে বের হন।
- অনেকেই ‘পেছন থেকে ডাকা অমঙ্গলকর’ এই কথাটাও যুক্তিহীনভাবে বিশ্বাস করেন।
- অজপাড়া গাঁয়ে এমন ধারণা আছে, ঘুম থেকে উঠে কিছুকিছু মানুষের মুখ দেখলে দিন খারাপ যায়। এর ফলে সৃষ্টি হয় মানুষে মানুষে বিভেদের আর শত্রুতার।
মানব মন থেকে কুসংস্কারের এই জগদ্দল পাথরটিকে সরানো যদিও খুব সহজ কাজ নয়, তারপরও সর্বস্তরের মানুষকে এই অন্ধকার দূরীকরণে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। সামাজিক মাধ্যমগুলোয় জোর প্রচার চালাতে হবে। ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক কুসংস্কার দূর করে আলোর পথ দেখাতে হবে, সমাজকে নতুনভাবে গড়তে হবে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ নিশ্চিত করতে হবে।
- সবাইকে কুসংস্কারের এ অন্ধকার বিশ্বাস দূরীকরণে এগিয়ে আসতে হবে।
- পর্যাপ্ত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে জোরপ্রচার চালাতে হবে।
- ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
- সামাজিক কুসংস্কার দূর করে আলোর পথ দেখতে হবে, সমাজকে নতুনভাবে গড়তে হবে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ নিশ্চিত করতে হবে।
ছোটখাটো বিষয়ে যেসব কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তাতে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতিকর প্রভাব না দেখা গেলেও আসলে মানবজীবনে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। কুসংস্কারের প্রভাবে মনে যে সংকীর্ণতা দেখা দেয়, তা প্রতিফলিত হয় তার আচরণে, কাজকর্মে।