অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অর্থ পাচার

বর্তমান সময়ে অন্যের মাল আত্মসাৎ করার প্রবণতা বেশ বেড়েছে। সমাজকল্যাণ থেকে এতিম ও অসহায়ের নামে টাকা তুলে অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নিজের নামে বাড়ি-গাড়ি করছে। এ ছাড়া সরকারি অর্থ-সম্পদ বণ্টনের দায়িত্ব যাদের দেওয়া হচ্ছে, তারা এসব সুষম বণ্টন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

কোথাও আত্মসাৎ করে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ছে। মানুষ কতটা কঠিন হলে, ভেতরটা কতটা নিকৃষ্ট হলে নিরীহ অসহায় মানুষের অর্থ ও খাবার নিজেরা ভক্ষণ করে! অথচ অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করাকে ইসলাম চরম ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। 

মহান আল্লাহ বলেন, 'অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করবে না। মানুষের সম্পদের কিছু অংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে দখল করার উদ্দেশে আদালতে মামলা দায়ের করবে না।' (সুরা বাকারা : ১৮৮)।

আত্মসাৎ কী?

রাষ্ট্র, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি- যে কারও সম্পদ স্বীকৃত নিয়মের বাইরে নিজের ভোগে নেওয়াকে আত্মসাৎ বলা হয়। সব ধরনের আত্মসাৎ ইসলামে নিষিদ্ধ। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের এমন কিছু কাজ আছে, যা সামান্য মনে হলেও সেসব কাজ আত্মসাতের অন্তর্ভুক্ত। সেসব কাজ থেকে বিরত থাকা চাই। যেমন- অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দ গাড়ি পারিবারিক কাজে ব্যবহার, অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দ টেলিফোনে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, অফিসের খাতাণ্ডকলম বাসায় এনে সন্তানদের লিখতে দেওয়া, টেন্ডার থেকে কমিশন গ্রহণ করা, যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিনা ভাড়ায় যানবাহনে যাতায়াত করা, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্তভাবে কাজ করে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বখশিশ নেওয়া, প্রতিষ্ঠানের নামে কালেকশন করে নিজের পকেট ভারী করা। চাঁদাবাজি, ধোঁকাবাজি, প্রতারণামূলক দালালিসহ আমাদের সমাজে আরও অনেক পদ্ধতি আছে, যা ইসলাম, প্রচলিত আইন ও বিবেক- সবকিছুর দৃষ্টিতে অন্যায়। এসব পদ্ধতিতে উপার্জিত সুবিধা, সম্পদ, সেবা ইসলামের পরিভাষায় হারাম। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আদেশ করেছেন, 'হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং পবিত্র আছে, তা থেকে খাও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' (সুরা বাকারা : ১৬৮)।
  • আত্মসাৎকারী জাহান্নামি...
  • আত্মসাৎ সামান্য হলেও খেয়ানত...
  • আত্মসাৎকারীর নেকি হকদার পাবে...
  • আত্মসাৎকারীর দোয়া কবুল হয় না...
বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া অর্থ বৈধভাবে ব্যাংকে রাখার সুযোগ থাকে।

বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ দুবাইয়ে বাড়ি কিনেছেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ আবার স্থায়ীভাবে দুবাইয়ে থাকছেন। দুবাই থেকে সুবিধামতো যেকোনো দেশে যেতে পারছেন। এমন ২ জন রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ীর সঙ্গে বছর তিনেক আগে দেখা হয়েছিল ব্যাংককে।

দেশ থেকে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায়, এগুলো তার অতি ক্ষুদ্র নমুনা। এর বাইরে ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানির দাম কারসাজি করে প্রতি বছর পাচার করেন কমপক্ষে ৭০ হাজার কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট প্রকাশ করে এ তথ্য বারবার জানিয়েছে। কিন্তু সরকার এসব তথ্য বিবেচনায় নেয়নি।

দেশের কল্যানে আমাদের অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অর্থ পাচার রোধে সকলকে সরকারের সাথে সাহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।।