জেদ এবং হার-জীত চেতনা

আমাদের সকলের মধ্যেই জেদ আছে। তবে কারো ক্ষেত্রে সেটা একটু বেশী থাকে আবার কারো ক্ষেত্রে একটু কম থাকে। তবে এই জেদ যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে অবশ্যই সফলতা লাভ করা যায়।

জেদের ফলাফল :

প্রকৃত জেদি সেই ব্যক্তিই যে কর্মের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করে নিজের জেদকে প্রকাশ করে থাকে।

মানুষের অতিরিক্ত জেদ অনেক সময় ভয়ংকর কোনো বিপদ নিয়ে আসতে পারে।

জেদ হল এই জগতের সবচেয়ে ভয়ংকর একটা দিক, এর প্রভাবে কোনো ব্যক্তি জীবনে সফলতার মুখ দেখে আবার কেউ নিজের সর্বনাশ করে বসে।

জেদি হওয়া কারও ক্ষেত্রে ভালো জিনিস হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে খারাপ হতে পারে। কোনো ব্যক্তি কিভাবে নিজের জেদ কে ব্যবহার করছে এটা শুধুমাত্র তার ওপর নির্ভর করে, যে তার জেদ খারাপ নাকি ভালো।

জেদি মানুষদেরকে বিভিন্ন সময়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু যারা সকল বাধা বিপত্তি এড়িয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় সেই জেদি মানুষগুলোই সফলতার দেখা পায়।

কোনো রাষ্ট্রপতির গুণাবলির মধ্যে জেদ হলো অন্যতম একটি গুণ, তবে এটি নেতিবাচকও হয়ে পড়ে আবার ইতিবাচকও। তিনি যদি নিজের জেদি মনোভাবকে দেশের উন্নতির কাজে নিয়োজিত রাখেন তাহলে সেই দেশ উন্নতি করতে বাধ্য, তবে যদি সেই জেদ অহংকারের সাথে মিশে যায় তবে ফল বিপরীত হতে পারে।

কোনো দুর্বল মানুষকে কখনোই তার জেদ থেকে দূরে রাখা উচিত না। কারণ একজন দুর্বল ব্যক্তির জন্য নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তার জেদ।

কোনো মহিলা মানুষের জেদ না থাকাটাই উত্তম, কারণ একটা মহিলার জেদ অনেক সময় একটা পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। অন্য দিকে একটি পুরুষের জেদ তাকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে সাহায্য করে।

জেদ জীবনে অনেক কিছু পাওয়ার জন্য কাজে লাগলেও কিছু কিছু সময় তা হারানোর কারণ বটে।

যে ব্যক্তি সারাক্ষণ জেদের বশবর্তী হয়ে থাকে, সেই ব্যক্তি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অসুখী।

যার অকারণে জেদ করার স্বভাব বেশি, সাফল্য কখনও তার কাছে এসে ধরা দেবে না।

হার-জীত 

আমি বলে রাখি, আমি হতাশাবাদী নই। তবুও মাঝে মাঝে রাগে ক্ষোভে নিজের মাথার অবশিষ্ট চুলগুলো টেনে তোলার চেষ্টার বাকি থাকে না।
কিন্তু পরক্ষণে আশায় বুক বাঁধি, সামনের বার নিশ্চয় পারবে। আশা বা স্বপ্ন আছে বলেই মানুষ বেঁচে থাকতে পারছে।

হার-জিত চিরদিন থাকবেই, তবুও এগিয়ে যেতেই হবে।
বাঁধা বিঘ্ন না পেরিয়ে, বড় হয়েছে কে কবে।।

কে প্রথম আর কে দ্বিতীয়, ভাবছো কেনো মিছে।
আসল কথা সামনে যাবো, রইবো না কেউ পিছে।।
জীবনটা তো অনেক বড়, মনটা কেনো ছোট করো।
দুনিয়াতে একি সাথে, ক'দিন বলো কে রবে।।

সুখ-দুঃখে পাশে পাশে, রইবো আমরা মিলেমিশে।
জয়-পরাজয় সে কিছু নয়, মানুষ যদি হই সবে।।

জেতার মনোভাব গঠনে কিছু উক্তি :

০১. "করে ফেলার আগে সবকিছুই অসম্ভব মনে হয়"
- নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা

০২. "আমার সাফল্যের গোপন সূত্র হলো, আমি কখনও হার মানি না"
- উইলমা ম্যানকেলার, আমেরিকান রাজনীতিবিদ

০৩. "যা চিন্তা করা ছাড়া তোমার একটি দিনও কাটে না, সেই জিনিসের ব্যাপারে কখনও হাল ছেড়ো না।"
- উইনস্টন চার্চিল, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ 

০৪. "কখনো হাল ছাড়বেনা। নিজের শক্তির পুরোটা দেয়ার পরও আরও দেয়ার চেষ্টা করো।"
- ডেবি রেনোল্ডস, আমেরিকান অভিনেত্রী ও উদ্যোক্তা

০৫. "ব্যর্থতাকে ভয় করার বদলে, চেষ্টা না করে বসে থাকাকে ভয় করো।"
- রয় টি. বেনেট, লেখক ও বক্তা

০৬. "পৃথিবীর বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সেইসব লোকদের দ্বারা হয়েছে, যারা সব আশার আলো নিভে যাওয়ার পরও চেষ্টা করে গেছে।"
- ডেল কার্নেগী, লেখক ও মোটিভেটর

০৭. "অনেক মানুষ ব্যর্থ হয়েছে শুধু হার মেনে নেয়ার কারণে। অনেকেই হার মেনে নেয়ার সময়ে বুঝতেও পারেনি তারা বিজয়ের কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।"
- টমাস আলভা এডিসন, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও সফল উদ্যোক্তা

০৮. "কোনও অবস্থাতেই হাল ছেড়ো না, কারণ সময় যখন সবচেয়ে খারাপ, তখনই স্রোত নতুন দিকে মোড় নেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।"
- হ্যারিট বীচার স্টোয়ি, আমেরিকান লেখিকা ও দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী