নেশা ও মাদকের গোপনীয়তা

আসক্তি জন্মায় এমন যেকোন কিছুই তো নেশা। সে হতে পারে কোন খাবার, কোন কাজ বা খুব সামান্য কোন অভ্যস। যা আমরা বারবার ঘুরে ঘুরে করতে চাই তাই আমাদের নেশা। নেশা ভালো এবং খারাপ দুটোই হতে পারে। যদি কোন মানুষ বই পড়া, নতুন কিছু শেখার, ভালো কিছু চিন্তা করার নেশা তৈরি করতে পারে।

মাদক বা মাদকদ্রব্য বলতে এমন বস্তুসমূহকে নির্দেশ করা হয় যারা শরীরে প্রবেশ করলে কিছু স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক ঘটে এবং পৌণ: পৌণ: এসব দ্রব্য গ্রহণে আগ্রহ জন্মায়। নেশাদায়ক পদার্থের মধ্যে নিকোটিন, মরফিন, হেরোইন, এলএসডি., কোকেইন প্রভৃতি প্রধান। হেরোইন, একটি শক্তিশালী মাদক ও নেশাদায়ক।

মাদকাসক্তি কি?
মাদক নির্ভরতা বা মাদকাসক্তি, এছাড়াও ঔষধ নির্ভরতা হিসেবে পরিচিতি, একটি অভিযোজনমূলক অবস্থা যা দ্বারা মূলত পুনরাবৃত্তিমূলক ঔষধ ব্যবহার বা সেবন করা বা এর বিকাশ লাভ করাকে বুঝিয়ে থাকে, যার ফলাফলস্বরুপ ঔষধ ব্যবহার প্রত্যাহার নিতান্ত হয়ে পড়ে।

মাদকদ্রব্য সেবনে মানুষের আচরণে কি পরিবর্তন ঘটে?
মাদকের প্রভাবে আচরণের পরিবর্তন হয়। আচরণের পরিবর্তন হয় মূলত মানসিক কারণে। যেমন বিষণ্ণতা, অমনোযোগিতা, আচরণে অস্থিরতা দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়।

মাদকাসক্ত কিনা বোঝার পদ্ধতি
(১) খাওয়ার প্রবণতা এবং ঘুমের সময়সীমার পরিবর্তন চলে আসলে। ...
(২) চোখ লাল হয়ে থাকলে এবং চোখের মণি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট দেখালে।
(৩) নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত পড়লে। ...
(৪) চেহারা এবং পোশাকের পরিধান ও যত্নে অবনতি দেখা দিলে।

মানুষ কেন মাদক সেবন করে?

সাধারণভাবে, লোকেরা কয়েকটি কারণে ওষুধ গ্রহণ করে:
ভাল লাগার জন্য. ওষুধগুলি আনন্দের তীব্র অনুভূতি তৈরি করতে পারে। এই প্রাথমিক উচ্ছ্বাসটি অন্যান্য প্রভাব দ্বারা অনুসরণ করা হয়, যা ব্যবহৃত ওষুধের প্রকারের সাথে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, কোকেনের মতো উদ্দীপকগুলির সাথে, উচ্চ শক্তির অনুভূতি, আত্মবিশ্বাস এবং বর্ধিত শক্তির অনুভূতি দ্বারা অনুসরণ করা হয়। বিপরীতে, হেরোইনের মতো ওপিওডের কারণে সৃষ্ট উচ্ছ্বাস আরাম এবং তৃপ্তির অনুভূতি দ্বারা অনুসরণ করা হয়।

ভালো বোধ করতে। 
কিছু লোক যারা সামাজিক উদ্বেগ, চাপ এবং বিষণ্নতায় ভোগে তারা কম উদ্বিগ্ন বোধ করার চেষ্টা করার জন্য ওষুধ ব্যবহার শুরু করে। মাদকাসক্তি থেকে পুনরুদ্ধার করা রোগীদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস ওষুধের ব্যবহার শুরু এবং চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুনরায় সংক্রমণ (মাদক ব্যবহারে ফিরে আসা) একটি প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরও ভালো করতে। 
কিছু লোক স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে বা খেলাধুলায় তাদের দক্ষতা উন্নত করার জন্য চাপ অনুভব করে। এটি প্রেসক্রিপশন উদ্দীপক বা কোকেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করার চেষ্টা বা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে।

কৌতূহল এবং সামাজিক চাপ। 
এই ক্ষেত্রে, কিশোর-কিশোরীরা বিশেষ করে ঝুঁকির মধ্যে থাকে কারণ সহকর্মীদের চাপ খুব শক্তিশালী হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল হল একটি বিকাশকালীন সময় যেখানে ঝুঁকির কারণগুলির উপস্থিতি, যেমন সহকর্মীরা যারা ওষুধ ব্যবহার করে, পদার্থের ব্যবহার হতে পারে।

মাদক কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
মাদক, মাদকাসক্তি এবং এর পরিণতি নিয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন—এ বিষয়ে তার মতামত মন দিয়ে শুনুন। খেলাধুলা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। গোপন নজরদারি করবেন না, সন্তানকে না জানিয়ে তার ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি দেখার চেষ্টা করবেন না। মোবাইল ফোনের অযৌক্তিক আর বেশি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করুন।

আসুন জেনে নেই নেশাদ্রব্যের গ্রাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যা করবেন।

পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব
বর্তমান নেশা থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে অন্য কোনো নেশা যেমন জুয়া খেলা, ধূমপান কিংবা অতিভোজন ইত্যাদির দিকে ঠেলে না দেয়ার বিষয়ে যত্নশীল হোন। এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব এবং কলিগ বা সহযোগীদের সাহায্য গ্রহণ করুন।

মানসিক ও দৈহিক
নিয়মিত শরীর চর্চার বিষয়ে যত্নশীল হোন। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে শরীর থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যেটা আপনাকে মানসিক ও দৈহিকভাবে ভালো বোধ দিতে সক্ষম।

নেশা ছাড়তে হবে
যদি নেশা করা ছেড়ে দেয়ার কারণে আপনার দেহে কোনো অবাঞ্ছিত সমস্যা তৈরি হয়, সেই অজুহাতে আবার নেশা করা শুরু করবেন না। ভালোভাবে মনে করুন এই অবাঞ্ছিত সমস্যার মূল কারণ কী এবং পরবর্তিতে সেই কারণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

যাতায়াত 
যেসব জায়গায় গিয়ে আপনি নেশাদ্রব্য সেবন করতেন কিংবা ক্রয় করতেন, সেসব জায়গায় যাতায়াত বন্ধ করুন। যারা নেশাদ্রব্য সেবন করে না তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করুন এবং যেসব বন্ধুবান্ধব নেশাদ্রব্য সেবন করে তাদের থেকে দূরে থাকুন।
নিজে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ

নেশা ছাড়ার জন্য নিজে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। নিজের নিজে বলতে শিখুন, আমি আর নেশা করব না।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
নেশা ছাড়তে জন্য মনস্থির করার পর একজন ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারে। পরামর্শ মেনে চললে আপনি নেশা ত্যাগ করতে পারবেন। এছাড়া এ সময়ে আপনার শারীরিক চেকআপ প্রয়োজন।