
স্বদেশপ্রেম বা স্বদেশ চেতনা ইমানের অঙ্গ। এটি বহুল আলোচিত প্রবাদপ্রতিম মধুর প্রবচন। এতে নিহিত রয়েছে পরিশ্রুত ভাবাবেগ, বৃহত্তর কল্যাণবোধ, মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সংকল্প। নিজ দেশ, নিজ মাতৃভূমি, জাতীয় পতাকা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, সংবিধান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার নামই দেশপ্রেম।
এ বোধ, আবেগ ও চেতনা যাদের আছে তারা দেশপ্রেমিকের বিশেষণে বিশেষায়িত। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের মানুষ, সম্পদ ও প্রকৃতির সেবা, লালন ও উত্কর্ষ সাধন হয়ে পড়ে দেশপ্রেমিকের জীবনব্রত।
ইসলামে দেশপ্রেমের পরিধি ব্যাপক। ইসলামে দেশপ্রেমের ভিত্তি হলো আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা (আল হুব্বু ফিল্লাহ), আল্লাহর সৃষ্টিকুলের প্রতি ভালোবাসা ও সেবা (খিদমাতু খালক) এবং মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ (উসওয়াতুন হাসানা) অনুসরণ ও মুক্তির প্রত্যাশা।
ক্ষুদ্র স্বার্থ ও ব্যক্তিগত কল্যাণের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় স্বার্থ ও সামষ্টিক কল্যাণ যখন নাগরিকের মনে ও কর্মে সক্রিয় হয়ে উঠে, তখন জ্বলে ওঠে দেশাত্মবোধের অনির্বাণ শিখা। ধর্ম, দেশ, জাতি যখন বহিঃশত্রুর আগ্রাসনের শিকার হয়, লুণ্ঠনের মহড়া চলে এবং জুলুমের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন গোটা জাতির সুপ্তিমগ্ন দেশপ্রেম জেগে ওঠে, তারা প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রাণ উত্সর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ধর্মপরায়ণতা জাতিকে ঐক্যের ডোরে আবদ্ধ করে। অন্যদিকে ধর্মান্ধতা বিভেদের প্রাচীর তৈরি করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভাজিত করে ফেলে। ধর্মপরায়ণ দেশপ্রেমিক আপন মাতৃভূমিকে ভালোবাসে, সমর্থন করে ও দেশ রক্ষায় জীবন বাজি রাখে। অন্যদিকে ধর্মান্ধ দেশপ্রেমিক নিজ ধর্মগোষ্ঠী, বর্ণ ও দলীয় রাজনীতির প্রতি থাকে পক্ষপাতপূর্ণ ও একপার্শ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি।
উদারতা ও ভালোবাসা থেকে নিষ্কলুষ দেশপ্রেম জন্ম নেয় আর ঘৃণা, ভিন্নমত ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হীনমানসিকতা পোষণ থেকে তৈরি হয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতা। নিজের লোক, নিজের দল ও নিজেদের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা আদেশ অন্ধভাবে সমর্থন উগ্র জাতীয়তার পরিচয়। দেশপ্রেমের নামে বর্ণবাদী ধারণা বিশ্বে অনেক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। উগ্র জাতীয়তা (আসাবিয়া) ইসলাম অনুমোদন করে না, এটা পাপ হিসেবে গণ্য। ( সুনানে আবু দাউদ : ৫০৯৭) হিটলার ও মুসোলিনি এমন মানসিকতার অধিকারী ছিলেন। দেশপ্রেমের নামে তাঁরা যথাক্রমে জার্মানি ও ইতালিকে অন্ধভাবে ভালোবাসতেন, অন্যান্য দেশ ও জাতিকে ঘৃণা করতেন এবং গোটা বিশ্বকে পদানত করতে চাইতেন।
• প্রথমেই রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। যেমনঃ ভোট প্রদান, ট্যাক্স প্রদান, দেশের উন্নয়নে অংশ গ্রহন, মানব সেবা, রাষ্ট্রিয় বা সরকারি আদেশ বা বিধি-নিষেধ মান্য করা ইত্যাদি
• রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকা
• প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলা
• ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করাও নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব
• আয় অনুযায়ী কর দিয়ে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে হবে
• জনগণের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা সব কাজ সঠিকভাবে করতে প্রয়োজনে সহযোগিতা করা
• সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ও শিশুদের নির্দিষ্ট বয়সে স্কুলে পাঠানো বাবা মায়ের দায়িত্ব
• নিজস্ব সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় অর্জন, সফলতা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় ইতিহাস, জাতীয় বীর ও মনীষীদের অবদানকে স্মরণ করতে হবে
• সমাজে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে
• সামর্থ থাকলে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে।
দেশপ্রেম থাকলেই সুনাগরিক হয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে অবদান রাখা যাবে। বিশ্বের বুকে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরাও সম্ভব হবে।