সম্মিলিতভাবে কাজের মানসিকতা


সামাজিক নির্ভরশীলতা আমাদের সমাজে বেশ হ্রাস পেয়েছে। ২০ বছর আগেও আমাদের পারিবারিক-সামাজিক বন্ধন ছিল খুবই দৃঢ়। এখন বিশেষ করে শহুরে জীবন হয়ে পড়েছে একেবারে ইটের দেয়ালের মতো। একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় না। কেউ কারও খোঁজ নেওয়ার সময় যেন নেই-ই। একই ভবনে ভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকলেও কেউ কাউকে চেনে না। পরস্পরের সুখে-দুঃখে কেউ এগিয়ে আসে না। বিপদআপদে আমরা একে অপরের কাছে আগের মতো ছুটে যাই না। 

ধর্মীয় শিক্ষা থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। ইসলাম ধর্মের যে শিক্ষা, তা আমরা এখন চর্চা করি না। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন বা সমাজে ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের অনুশীলন নেই। মা-বাবার প্রতি সন্তানের যে দায়িত্ব ইসলাম ধর্মে রয়েছে, তা পালন করলে সামাজিক জীবন অনেক সুন্দর হয়ে যেত। প্রতিবেশীর প্রতি ইসলামের যে হক রয়েছে, তা পালন করলে আমাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হবে। আমাদের নিজ ধর্মের অনুশীলনে ফিরে আসতে হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম সবার জন্য স্বধর্মের মৌলিক শিক্ষার চর্চা, অভ্যাস ও পালন জরুরি। সরকার ও সমাজের কর্তাব্যক্তিদের এ কাজে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সমাজে শান্তি, রাষ্ট্রে ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌজন্য বোধ, পরোপকারের মানসিকতার সৃষ্টি হবে। এতেই সমাজ সুন্দর হবে।

ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা দেশের মানুষ পুরোপুরি কি উপভোগ করতে পারছে? ব্যক্তিস্বাধীনতা কি আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সবাই ভোগ করতে পারছে? পত্রিকার নানা রিপোর্ট, লেখা, প্রতিবেদন দেখে মনে হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতা নানাভাবে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যক্তিস্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সংবাদ ও প্রিন্ট মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেমন যেন পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে আমাদের মিডিয়া বিরাজমান। 

কোনো কোনো মিডিয়া যেন নিজেই নিয়ন্ত্রিত হতে বেশ আগ্রহী। এ অবস্থা কোনোক্রমেই ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য কাম্য নয়। অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা ছাড়া মানুষের সুকোমল কালগুলো বিকশিত হয় না। বাড়িতে, সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্রই অবাধ স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের ভোগ করার সুযোগ থাকতে হবে। কথা বলার, শেখার, মতপ্রকাশের মুক্ত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আমরা একে অপরের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। অন্যের মতামত শুনতে চাচ্ছি না। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ক্ষেপে যাই। ক্ষুদ্র বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে আঘাত করি; এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধা করি না। এর কারণ আমাদের বের করা দরকার। আমাদের রয়েছে সুশিক্ষার অভাব। প্রকৃত শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত হতে পারিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষাকে মানব কল্যাণের মূল হাতিয়ার হিসেবে সাজাতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই প্রকৃত মানুষ হয়ে আমরা সমাজে বড় হয়ে উঠতে পারব।