১. পরচর্চা ও রটনা
কারো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে বাজেভাবে কথা বলা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অভ্যাস। এ অভ্যাস আপনার থাকলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাদ দেওয়াই ভালো। পরচর্চা ও রটনার অভ্যাস থাকলে তা আপনার বাজে ইমেজ তৈরি করবে। এতে অন্যরাও আপনার সম্পর্কে অনুরূপ চর্চার সুযোগ পাবে।
২. বিচার করা
আপনি কারো সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে বিচারমূলক মন্তব্য কিংবা সিদ্ধান্ত প্রকাশ করলে তা নিঃসন্দেহে অন্যরা পছন্দ করবে না।
আর এর মাধ্যমে আপনি নিজেরও ক্ষতি করবেন। কারণ এতে অন্যরা আপনাকে কোনো বিষয় জানাতে চাইবে না। আপনার মতামতও তারা গ্রহণ করবে না।
৩. নেতিবাচক মনোভাব
জীবনের সবকিছু নেতিবাচকভাবে দেখা অনেকের স্বভাব।
এ স্বভাবের ফলে তারা অন্যের বিরাগভাজন হয়। অন্যদিকে সব বিষয়ে যারা ইতিবাচক ভাব প্রকাশ করে এবং ইতিবাচক মন্তব্য করে তারা অন্যের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়।
৪. অভিযোগ
কোনো বিষয়ে বা কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা সহজ। আর যারা এ অভ্যাসটি আয়ত্ত করে, তারা সব সময় অভিযোগ করতে থাকে। ক্রমে এ বিষয়টি আবহাওয়া, কাজ, খবর ইত্যাদি সব বিষয়েই ছড়িয়ে পড়ে।
আর কথায় কথায় অভিযোগকারীরা কারো প্রিয়পাত্র হয় না।
৫. অজুহাত তৈরি
কাজের বদলে কথাবার্তায় অনেকেরই বেশি আগ্রহ থাকে। সঠিকভাবে কাজ করার বদলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তা অসম্পূর্ণ রাখা অনেকের স্বভাব। নিজের ভুলের জন্য নানা মানুষকে দায়ী করতে তারা পিছপা হয় না। কিন্তু সহজেই এসব বিষয় অন্যদের নজরে পড়ে যায় এবং তারা অন্যদের বিরাগভাজন হয়ে ওঠে।
৬. বড় ধারণা
নিজে যা তার চেয়ে বড় ধারণা অনেকেই পোষণ করে এবং অন্যের কাছে তা জাহির করে। এ ধরনের মানুষ কথাবার্তায় নিজের বিষয়ে একটি বড় ধারণা প্রকাশ করে। এটি এক ধরনের মিথ্যাচার এবং এর ফলে অন্যরা তাকে অপছন্দ করা শুরু করে। এ ধরনের মানুষ অন্যের কথা শোনার তুলনায় নিজের কথা বলতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
৭. যুক্তিহীন গোঁড়া মতাদর্শ
কোনো বিষয়ে যারা যুক্তিহীন বা গোঁড়া মতবাদ বিশ্বাস করে এবং জোরের সঙ্গে প্রকাশ করে, তা অন্যদের কাছে সত্যিই বিভ্রান্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এ ধরনের মানুষ অন্যের যুক্তি কোনোমতেই বিশ্বাস করে না। এমনকি কোনো তর্কতেও তারা পুরো বিষয়টি ভণ্ডুল করে দেয়। এ কারণে যুক্তিহীন ও গোঁড়া মতাদর্শীরা অন্যের বিরক্তির কারণ হয়।
নিজেকে জাহির করার নমুনা:
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের স্যুট-বুট পরা শুরু করা থেকেই এই জাতি নিজেকে মিথ্যেভাবে জাহির করা শুরু করে। কিন্তু সেই মিথ্যেভাবে জাহির করার বিষয়টি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে এলো তখন তা অতীতের সব সীমাকেই লংঘন করেছে!
সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ে তা হলো অধিকাংশ ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার আড়ালে ঢেকে নিজেদের ভুলভাবে উপস্থাপন করে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করছেন। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপিত নিজের ছবিতে এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে উপস্থাপিত ব্যক্তির সঙ্গে প্রকৃত ব্যক্তির অধিকাংশই ক্ষেত্রেই মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
সৌন্দর্যের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আদিকাল থেকেই একটি বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রসঙ্গত, একজন আমেরিকান লেখক এবং সাংবাদিক নাওমি ওল্ফের লেখা একটি বইয়ের কিছু তথ্য তুলে ধরছি। 'মিথ অফ বিউটি' নারীবাদী তত্ত্বের ওপর লেখা একটি ক্লাসিক রচনা, মূলত ১৯৯০-এর দিকে লেখা হয়েছিল। এতে লেখক বহু অধ্যয়ন এবং গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, নারীমুক্তি, নারীর অগ্রগতি এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে মানুষের ক্রমবর্ধমান বিভ্রান্তির ওপর আলোকপাত করেছেন।
একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলা উচিত যে, 'মিথ অফ বিউটি'- র উল্লেখের মাধ্যমে আমি কোনোভাবেই সরাসরি নারীদের আমার লেখার একমাত্র বিষয়বস্তু করিনি। অধিকাংশ সময় আমরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ফিকে বা স্বল্প মেয়াদি মনোভাব পোষণ করে থাকি; কারণ এই মনোভাবের দীর্ঘ মেয়াদে যখন তা নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান গ্রহণ করে তখন তা থেকে আমরা নীরবে সরে আসি।
এখন প্রশ্ন হলো বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমরা যে এত কথা বলি তা কি প্রকৃত অর্থে আমরা নিজেরা বিশ্বাস করি? অনেকেই বলে থাকেন যে মানুষ সমাজে শ্বেতাঙ্গদের অনেক বেশি দাম দিয়ে থাকেন যেসব ব্যক্তির গায়ের রং ভালো তাদের অনেক বেশি দাম দিয়ে থাকেন এবং যাঁদের গায়ের রং শ্যামলা বা কালো তাঁরা অনেকক্ষেত্রেই সমাজে তাঁদের উপযুক্ত জায়গা গড়ে তুলতে পারেন না এবং সবক্ষেত্রে সমান প্রাধান্য পান না; যেটাকে তাঁরা এক ধরনের অসম্মান হিসেবে বিবেচনা করেন। আমিও তাদের সঙ্গে একমত কিন্তু কোনোভাবেই একমত হতে পারি না তাঁরা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ভিন্নভাবে প্রদর্শনের চেষ্টায় রত থাকেন। এতে একটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে, তাঁরা কি নিজেরা এই বর্ণবাদের অপবাদে নিজেদেরই আঘাত করছেন না? এই ধরনের আচরণ পরিবর্তন না হলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব নয়।